www/content/bengali/posts/umujaa.md

63 lines
7.2 KiB
Markdown
Raw Normal View History

2023-01-25 06:45:49 +00:00
+++
title = "উমুজা"
date = 2021-01-11
author = "Palash Bauri"
tags = [ "নারী", "পৃথিবী",]
+++
১১ জানুয়ারি , ২০২১
অনেকদিন আগে একটা ভিডিও দেখলাম। আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়া দেশে একটি এমন
গ্রাম আছে যেখানে কোনো পুরুষ নেই। আরে শুনতে অবাক লাগে , তাই না ? কিন্তু
এটাই বাস্তব। একজন মহিলা একাই এমন একটি গ্রাম তৈরি করেছেন যেখানে পুরুষের
প্রবেশ পর্যন্ত নিষেধ , সেখানে আমি পর্যন্ত ঢুকতে পারব না। কেনিয়া দেশে
মরুভূমির মাঝে এমন একটি গ্রাম আছে , যার নাম "**উমুজা**" (উমুজা শব্দটির
অর্থ একতা বা Unity) । রেবেকা লোলোসোলি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য এই গ্রামের
পত্তন করেছেন এবং এই গ্রামে কোনো পুরুষ নেই।
প্রায় তিন দশক আগে তিনি তার স্বামীর কাছে অত্যাচারিত হন, তার স্বামী তার
উপর প্রত্যহ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। তারপর তিনি বাইরের জগতে বেরিয়ে
দেখেন যে তিনিই একমাত্র অত্যাচারিত নন , তার মত অনেক বিবাহিত মহিলাই
শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারিত হতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচারের সীমা
ছাড়িয়ে যেত যেখানে মহিলাদের গোপনাঙ্গ কেটে দেওয়া হত , বিকৃত করে দেওয়া হত।
এই ঘটনাগুলো এত প্রচলিত হয়ে গেছিল যে , যখন রেবেকা প্রশাসনের কাছে সাহায্য
চান , সেখানেও তাকে হতাশ হতে হয়।
তাই সবাই তাদের হাত গুটিয়ে নীলে রেবেকা ও ১৪ জন অন্য মহিলার সাথে মিলে এই
উমুজা গ্রামের পত্তন করেন। সেখানে তারা নিজের হাতে তৈরি করেন একটি আস্ত
গ্রাম। মাটি ও কাঠ দিয়ে তৈরি করেন সব ঘরবাড়ি। তবে এখানেই তাদের সমস্যা শেষ
হয়নি , তাদের প্রয়োজন ছিল অর্থের , তাই তারা ঠিক করলেন যে তারা নিজের হাতে
গয়না তৈরি করবেন এবং তা বিক্রি করেই তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয়
অর্থের সংস্থান করবেন। তারা পরবর্তীতে একটি বিদ্যালয়ের নিরমান করেন তাদের
ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য। 
অর্থের সমস্যা ছাড়াও রেবেকা ও মহিলাদের আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ,
তাদের গ্রামের আসে পাশে অনেক পুরুষশাসিত গ্রাম ডেরা বসায় উমুজা গ্রামে
পর্যটক আসা আটকাতে এমনকি মাঝে মাঝে তারা মহিলাদের গ্রামে আক্রমণ চালাত ও
লুটপাটও করত, কিন্তু রেবেকা ও মহিলারা কোনো কিছুতেই না হয়ে মনোবল ও বাহুবল
দিয়ে সব আক্রমণ আটকাতে সক্ষম হন । পরে তারা অর্থ সঞ্চয় করে গ্রামের আসে
পাশের অধিকাংশ জমি কিনে নেন।
তাদের এই ছোট্ট পৃথিবীতে শান্তিতে নাচ করেন , গান করেন , আনন্দ করেন এবং
নিজের ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলেন কোনো পুরুষের সাহায্য ছাড়াই। তাদের পুত্র
সন্তানদের সেখানে ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার নিদান রয়েছে ,
কিন্তু তারপরেও তারা তাদের মায়ের আশ্রয়ে থাকতে পারে যদি তারা সেখানের মহিলা
প্রধানদের সমস্ত নিয়মনীতি মেনে চলতে সম্মত হয়।
আজ, উমুজা গ্রাম একটি পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে , যদিও পুরুষদের
প্রবেশ নিষেধ! দেশ বিদেশ থেকে মানুষ আসেন শুধুমাত্র এই গ্রাম ও গ্রামের
মানুষদের দেখার জন্য।
আজকের একবিংশ শতাব্দীর বুকে দাঁড়িয়ে রেবেকা ও মহিলাদের উমুজা গ্রাম নারীর
ক্ষমতায়নের একটি জলজ্যান্ত আদর্শ । বিশ্বের নারীদের কাছে এই উমুজা গ্রাম
হল এক শক্তির প্রতীক , এই গ্রাম প্রমাণ করে দেয় নারীরা পুরুষের সমকক্ষ। এখন
সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ছদ্ম নারীবাদীদের ঢল দেখা যায় যারা তাদের ফলয়ারদের
অদ্ভুত সব নিদান দেয় ফলস্বরূপ মহিলাদের মনে তৈরি হয় নারী ক্ষমতায়নের এক
উদ্ভট ও অবাস্তব চিত্র। এইসব ছদ্ম নারীবাদীদের (pseudo feminist )  থেকে
দুরে থাকায় শ্রেয় বলে মনে হয়।
নারীরা নয়কো কম/ আছে তাদের কব্জিতে দম
~ পলাশ বাউরি