www/content/bengali/posts/motsanuvuti.md

83 lines
9.7 KiB
Markdown
Raw Blame History

This file contains invisible Unicode characters

This file contains invisible Unicode characters that are indistinguishable to humans but may be processed differently by a computer. If you think that this is intentional, you can safely ignore this warning. Use the Escape button to reveal them.

+++
title = "মৎস্যানুভুতি"
date = 2021-01-14
author = "Palash Bauri"
tags = [ "পরিবেশ", "প্রাণী",]
+++
১৪ জানুয়ারি , ২০২১
মাছ - নামটা শুনলেই অনেকের মনেই অনেক রকম ভাবনা মাথায় আসে যেমন সুস্বাদু
খাবার , ঘর সাজানোর উপকরণ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে কারো মাথায় আসে না তারাও
একটা প্রাণী। তাদেরও আমাদের মত দুঃখ, বেদনা ও অনুভূতি আছে।
আমরা যেমন অন্যান্য মাংসজাতীয় খাবারের জন্য অন্তত সামান্যও সমব্যাথি হয় ,
তেমনটি মাছের ক্ষেত্রে সিকিভাগও হইনা। আমরা মানুষেরা মাছেদের সাথে নিজেদের
কে এক সুত্রে মেলাতে পারিনা কারণ আমাদের মধ্যের ভিন্নতা - আমরা ডাঙ্গায়
থাকি , ওরা জলে থাকে; আমাদের ফুসফুস আছে, ওদের ফুলকা আছে, আমাদের গায়ে লোম
আছে , ওদের গায়ে আঁশ আছে প্রভৃতি প্রভৃতি। কিন্তু এখন যার কারো মনে হতেই
পারে , আমাদের সাথে তো গরু , ছাগল , মুরগি এদেরও তো বিস্তর পার্থক্য তাহলে
এদের সাথে আমরা নিজেদেরকে কিভাবে মেলাতে পারলাম?
সত্যি বলতে এর সঠিক উত্তর আমার জানা নেই , তবে আমার মতে যেহেতু অন্যান্য
স্থলচর প্রাণীর সাথে প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের সম্পর্ক ছিল এবং এদের
জীবনযাত্রা অনেকটা আমাদের মত , এছাড়া তাদের মধ্যে অনেক মানুষ সুলভ গুনও
আমরা রোজকার জীবনে পরিলক্ষিত করতে পারি তাই হয়তো আমরা ওদের সাথে এত সহজে
নিজেদেরকে একই সুত্রে মেলাতে পারি।  কিন্তু মাছেদের ক্ষেত্রে এগুলি
বেশিরভাগই সম্ভবপর হয়ে উঠে না , যদিও এদের মধ্যে অনেক মানুষসুলভ আচরণ আছে,
কিন্তু সেগুলো আমাদের রোজকার জীবনে লক্ষ্য করতে পারি না । যেমন ধরো , আমরা
রাস্তায় চলতে চলতে দেখতে পেতে পারি যে , একটি গাভী তার বাচ্চাদের দুগ্ধ পান
করাচ্ছে কিম্বা কোনো মা বিড়াল তার ছানাদের গা চেটে দিচ্ছে কিন্তু পুকুর
পাড়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও তুমি একটি মাছেরও দেখা নাও পেতে পারো , আর রোজ
রোজ সমুদ্রের গভীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে ঝুলিয়ে তো আর ঘুরতে যাওয়া
সম্ভব নয়।
ফলাফল স্বরূপ আমাদের অনেকেই মাছেদেরকে একটা জীবন্ত সজ্ঞান প্রাণী বলে
মানতেই পারি না। তাই আমরা বোঝার চেষ্টাও করি না তাদেরও সংবেদনশীলতা আছে -
এটা আমরা কোনোদিনও ভাবি না যা মাছেরও আমাদের মত ব্যাথা অনুভব করতে পারে!
বিজ্ঞানীরা চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে মাছেরও আমাদের
মানুষের মতোই ব্যথা বেদনা অনুভব করতে পারে। মাছেদেরও মানুষের ন্যায় একই
ধরনের বেদনা গ্রাহী অঙ্গ বা রিসেপ্টর আছে যা তাদের মস্তিষ্কে ব্যথার
অনুভূতি সৃষ্টি করে । বিজ্ঞানীরা মাছেদেরও ব্যথা অনভুত হয় এটি ব্যখা করার
জন্য একবার একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন -
দুটি জলপূর্ণ সংযুক্ত ট্যাঙ্ক যুক্ত সংস্থার নির্মাণ করে তাতে , কয়েকটি
জেব্রামাছ ছেড়ে দেওয়া হল। একটি ট্যাঙ্কে বিভিন্ন উদ্দীপক রাখা হল যেমন জলের
গাছপালা , পাথর ইত্যাদি; আর আরেকটি রাখা হল নির্জন ও ফাঁকা। দেখা গেল
মাছগুলি সাধারণভাবেই ফাঁকা ট্যাঙ্কটির দিকে না গিয়ে উদ্দীপকপূর্ণ
ট্যাঙ্কটির দিকে গেল। এবার মাছগুলিতে ব্যথাসৃষ্টিকারী অ্যাসিড ইনজেকশন দিয়ে
দেওয়া হল; এবং ফাঁকা ট্যাঙ্কটিতে সেই অ্যাসিডের প্রতিষেধক মিশিয়ে দেওয়া হল।
এবার মাছগুলিকে জলে ছেড়ে দেওয়া হল, দেখা গেল যে সব মাছুগুলি ফাঁকা
প্রতিষেধক মিশ্রিত ট্যাঙ্কটির দিকে ধাবিত হল। বারবার পরীক্ষাটি করা হলে
প্রতিবারেই একই জিনিস দেখা গেল। এখানে মাছগুলি সেটাই করল যেটা তুমি আমি ও
অন্যান্য যেকোনো প্রাণী করত। অর্থাৎ এখানে দুটি জিনিস জানা যায় , এক ,
মাছেদের ব্যাথা আছে এবং দুই,  মাছেদের বুদ্ধিমত্তা আছে।
[\[১\]](https://fb.watch/301rFRux01/)
তোমরা হয়তো জানলে অবাক হবে যে , কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাছেরা আমাদের অর্থাৎ
মানুষদের থেকেও বেশি সংবেদনশীল হতে পারে । মাছেদের সারা শরীরে , স্বাদ
গ্রাহীকা আছে যেখানে আমাদের এগুলি শুধু জিভেই আছে। মাছেদের দেহে বৈদ্যুতিক
প্রভাব অনুভব করার ক্ষমতা আছে, তাদের অনেকে আবার আমাদের থেকে বেশি রঙ দেখতে
পায় । তারা ব্যাথার সাথে সাথে দুঃখ , ভয় , আনন্দও অনুভব করতে পারে।
এবার আমার মাছকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার জন্য মাছদের হত্যা করি। মাছকে
মারার সবথেকে বহুল প্রচলিত উপায় হল শ্বাসকষ্ট দ্বারা মৃত্যু। মাছকে নদী,
সমুদ্র বা পুকুর থেকে ধরার পর তাদের এমনিই মৃত্যুর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
তাদের মৃত্যু হতে প্রায় কয়েকঘণ্টা সময় লাগতে পারে, এবার বুঝতেই পারছো তাদের
সেইসময় কি নিদারুণ ভয় , যন্ত্রণার অনুভব হয়। এছাড়া তো মাছ ধরার বা মারার
অন্যান্য পদ্ধতির কথা বাদই দিলাম; এক রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১০
লক্ষ্ কোটির বেশি মাছ ধরা হয় , অর্থাৎ এবার আন্দাজ কর মোট ভয় ও যন্ত্রণার
কথা!
*\[এই মৎস্য একটি দুই খণ্ড যুক্ত ছোট্ট সিরিজ যার সমাপ্তি হবে কাল\]*
মাছ খুব অবহেলিত / কে বোঝে তাদের ব্যথা
~ পলাশ বাউরি