www/content/bengali/posts/somaj-patan-asakti.md

11 KiB
Raw Blame History

+++ title = "সমাজ পতন : আসক্তি" date = 2021-01-29 author = "Palash Bauri" tags = [] +++ আগের দিন লেখাটিতে আলোচনা করছিলাম বর্তমান সমাজ সংস্থা অর্থাৎ সমাজে মানুষের জীবনধারণের প্রণালির ঠিক কী কী পর্যায়ে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। আগের দিনগুলিতে আলোচনা করেছিলাম সমাজ সংস্থার পতন হবে কি? হলে কিভাবে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার আলোচনার প্রয়োজন ঠিক কী কী কারণের জন্য বর্তমান সমাজ সংস্থার পতন হবে। 

 

সমাজের জীবনযাত্রার উত্থান, পতন ও পরিবর্তনের মুল কারিগর হল ছাত্র যুব সমাজ। তারা শিক্ষিত, তার নতুনের প্রতি আগ্রহী আবার নতুনকে গ্রহণ করতেও দ্বিধাহীন; কিন্তু অন্য দিকে যেহেতু যুবদের মন খুব নমনীয় ও ভেদনীয় তাই তাদের মধ্যেই সমাজের প্যরাসাইটরা সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের যুবসমাজের ভাবনাচিন্তা ও মানুষিকতার দ্বারা খুব সহজেই ভবিষ্যতের আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। 

বর্তমান যুব সমাজ নিয়ে আমি খুব শঙ্কিত। তারা আসক্ত আবার সেই আসক্তিকে তারা সর্বদা ন্যায়সঙ্গত ও মহিমান্বিত
প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। তাছাড়া তারা কখনই এও স্বীকার করে না তারা আসক্ত ফলস্বরূপ তাদের সেইসব আসক্তি কখনও শেষ হয় না, যেখানে কোনো সমস্যাই নেই সেখানে সমাধানের কি কাজ!?

তবে এখানে মনে রাখা উচিত, আমি যখন কোনো সমাজের নেতিবাচক দিক গুলি নিয়ে আলোচনা করি তার অর্থ এই নয় সমাজের সকল সদস্যই সেই গুণযুক্ত। তবে এও মনে রাখা আবশ্যিক, আলুর বস্তার পচন যখন ধরে তখন সেই পচনের সূচনা হয় কিন্তু মাত্র গুটিকতেক আলু নিয়েই। 

সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে যুবসমাজ আসক্ত সেটি হল, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি। এদের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি তার আগে জেনে নেওয়া যাক আর কি জিনিসে যুবসমাজ আসক্ত - 

ধূমপানে আসক্তি, মাদকে আসক্তি, পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তি, টেলিভিশনে আসক্তি, মোবাইল ও কম্পিউটার গেমসে আসক্তি, খাদ্যে আসক্তি , কাজে আসক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। 

তবে এখানে আমাদের উদ্দেশ্য যুবসমাজের আসক্তি নিয়ে অত্যাধিক আলোচনা করা নয় বরং সেই আসক্তি কিভাবে সৃষ্টি হয় এবং সেই আসক্তি দূরীকরণ করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা করা; তাছাড়া সমাজ সংস্থার ভবিষ্যতের উপর এইসব আসক্তি কিভাবে প্রভাববিস্তার করে সেই বিষয়ে আলোচনা করা। 

প্রথমে মানুষ কেন আসক্ত হয় সেটার উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন যে এইসব আসক্তির ফলস্বরূপ আমরা কি পাই? আমাদের অনুসন্ধান শুরু করতে হবে একেবারে গোঁড়া থেকে -

কানাডার চিকিৎসক ডাঃ গাবোর মেইটের মতে, মানুষের মনে হয় আসক্তির ফলে তারা তাদের চাপ, যন্ত্রণা থেকে তাদের মুক্তি দেয় এবং তাদের আরও মনে হয় , তারা যেন বিশাল কিছু একটা করে ফেলেছে বা সত্যিকারের বেঁচে আছে। তাছাড়া তো তুমুল উত্তেজনা ও তীব্র ভালো অনুভূতি ইত্যাদি তো আছেই। 

সহজ কথায়, আসক্তি মানুষের এমন কিছু একটা চাহিদা পূরণ করে যা সাধারণ জীবনে তাদের পূরণ হচ্ছিল না। আবার আসক্ত হওয়ার পেছনে শৈশবের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, দেখা গেছে যেসব মানুষ কোনোকিছুতে আসক্ত তাদের সবারই শৈশবে ছিল কিছু না কিছু জটিলতা - হয় মানুষিক জটিলতা , অর্থনৈতিক জটিলতা কিম্বা আরও অন্য কিছু। তবে এটা ভাবা অনুচিত যে, যেসব মানুষ যাদের শৈশব জীবনে জটিলতা ছিল তারাই আসক্ত হবে। (নিচের ছবিটা দেখলে ব্যপারটা আরও পরিষ্কার হবে)

 

আমাদের সমাজের অনেকেরই ধারনা আছে , যারা আসক্ত তারা নিজে নিজেই সেই পথে গেছে কিন্তু সেটা সবক্ষেত্রে সত্যি হয়না। সকালে ঘুম থেকে উঠে কেও তো আর ঠিক করেনা, আজ আমি আসক্ত হব! 

এবার ভিন্ন ভিন্ন আসক্তির জন্য তার দূরীকরণের পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে আসক্তির প্রভাব বিস্তার রোধ করার জন্য আমাদের সাময়িক উপশমের চেয়ে মুল সমস্যা খুঁজে তার প্রতিষেধকের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। একটি গাছের কাণ্ডটিকে শুধু যদি কাটা হয়, সে গাছ কিন্তু আবার কয়েকমাস পর মাথাতুলে দাঁড়াতে পারে কিন্তু যদি সেই গাছকে সমূলে উপড়ে ফেলি তাহলে সে গাছ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। [গাছ কাটা উচিত নয়; গাছ বাঁচাও প্রাণ বাঁচাও!]

শৈশবের ঠিক কী জটিলতা বা ঘাটতির ফলে মানুষ আসক্তিমুখি হচ্ছে সে নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। সেই সাথে মানুষিক ও দৈহিক ভাবে সুস্থ শিশু পালনের  নিয়ম নীতিও নব দম্পতিদের শেখানো বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। শিশুর জীবনে জটিলতা সৃষ্টির পিছনে কিন্তু মুল হাত থাকে পিতা মাতার; সন্তান উৎপাদনক্ষম হলেই কোনো পুরুষ বা মহিলা বাবা-মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে না । তাছাড়া আজকালের নতুন মা-বাবারা যা হয়েছে, তাতে শিশুর জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হবেই। সকালে মা-বাবা দুজনেই বেরিয়ে যায় অফিসে, বাচ্চা বড় হচ্ছে কাজের মাসির হাতে; আবার তারা বাড়িও ফেরেন মাঝ রাতে পার্টি শেষে শিশু ঘুমানোর পর!  হায়! বাবা-মায়ের নুন্যতম ভালবাসাটুকু জোটেনা শিশুর কপালে... (এই বিষয়ে একদিন বিস্তর আলোচনা করা যাবে)

আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো রকম আসক্তির ফলে সেই ব্যাক্তি ছাড়াও তার পরিবার এমনকি সমাজের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাছাড়া সেই আসক্ত ব্যক্তি যদি যুব সম্প্রদায়ের হয় তাহলে সেই প্রভাবের বিস্তার আরও বেশি হয়। আসক্তির ফলে মানুষ সমাজের মুল সমস্যাগুলি থেকে বিমুখী হয়ে থাকে যার ফলে সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তন তাদের দৃষ্টিগোচর হয়না। এটা একটা বিষাক্ত চক্রের মতো...। (নিচের ছবিটি দেখো)

[প্রথম ছবি Freepik থেক<E0A787><E0A695>

শিশু পায়না ভালবাসা / কারণ আরেক শিশু ভালবাসা পায়নি

~ পলাশ বাউরি